ইন্টারনেট থেকে আয় পর্ব 3

ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসাের্সিং |

আমরা অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসাের্সিং-এর নাম শুনেছি। কিন্তু দুইটির মধ্যে পার্থক্য কী তা ঠিকমতাে অনেকেই জানি না । সুতরাং ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য প্রথমেই আমাদের “ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসাের্সিং”-এর ব্যাপারটি ভালোমতাে জানতে হবে ।



আউটসাের্সিং কী?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আউটসাের্সিং এমন একটি কাজকে বােঝায় যেখানে একজন ব্যক্তি যখন কোনাে একটি কাজ নিজের নিজে বা অফিসের কাজি অফিসের কর্মচারী দিয়ে না করিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নেয় তখন সেটি হয়ে যায় ‘আউটসাের্সিং’ অর্থাৎ তার কাজটি সে অন্য কাউকে বা অন্য একটি উৎসের মাধ্যমে করিয়ে নিল ।


ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) বলতে কী বোঝায়?

Freelancer (মুক্ত পেশাজীবী) শব্দটি এসেছে ফ্রিল্যান্সার Freelancer (Sel-Employed) থেকে এবং যিনি Freelance Job করেন তাকেই Freelancer (মুক্ত পেশাজীবী) বলা হয়। অর্থাৎ এমন একজন পেশাজীবি যার সাধারণ অফিস কর্মকর্তাদের মতাে কোনাে অফিস নেই। তার পেশায় তিনি স্বাধীন। এমন পেশাই ফ্রিল্যান্সিং ।


ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) কী?

আমার ভাষায় ফ্রিল্যান্সিং বলতে এমন একটি কাজকে বােঝায় যেখানে একজন মানুষ কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সাথে ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে ঘরে-বাইরে, মাঠেঘাটে যে-কোনাে এক জায়গায় বসে ফাইল আদান-প্রদানের মাধ্যমে কোনাে একটি কাজ করে দেয়। তখন সেটাকে ফ্রিল্যান্সিং বােঝায়। এক্ষেত্রে এখানে যিনি কাজ করছেন আর যার কাজ করে দিচ্ছেন তাদের দূরত্ব যদি এক রুম থেকে আরেক রুমে হয়, ঠিক তখনাে তাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে বিবেচিত করা যাবে। এটি এমন কোনাে বিষয় নয় যে ফ্রিল্যান্সিং মানেই শুধু আমার দেশ থেকে অন্য আরেক দেশের মানুষের সাথে কাজ করাকে বােঝায়।

সুতরাং সহজেই বােঝা যায় ফ্রিল্যান্সার তাদেরই বােঝায় যারা অন্য একজনের কাজ কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সাথে ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে ফাইল আদান-প্রদানের মাধ্যমে করে দেয় আর আউটসাের্সার বলতে তাকেই বােঝায় যিনি কাজটি একজন ফ্রিল্যান্সারকে দিচ্ছেন। তাই বলা যায়, যিনি কাজ দিচ্ছেন তিনি আউটসাের্সিং করছেন, আর যিনি কাজ করছেন তিনি ফ্রিল্যান্সিং করছেন।


ফ্রিল্যান্সিং করলে কী ধরনের কাজ করতে হয়?

আমাদের অনেকেরই মাঝে প্রশ্ন থাকে যে আসলে কী ধরনের কাজ করে ইন্টারনেট থেকে ফ্রিল্যান্সাররা আয় করে। অনেকেই ভাবে একটি অ্যাকাউন্ট লাগে, অ্যাকাউন্ট করে কী যেন কাজ করতে হয়! আসলে তথ্যটি পুরােপুরি সঠিক নয়। একজন ফ্রিল্যান্সার আরেজন অফিসের কর্মজীবীর মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। কেমন? ধরুন একজন ভিডিও এডিটর বাংলাদেশের একটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করেন এবং মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন পান এবং তিনি সময় মতাে অফিসে যান ও আসেন। এখানে তাকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।

অন্যদিকে যদি ফ্রিল্যান্সার-এর কথা বলি, তবে দেখুন ব্যাপারটির সাদৃশ্য কতটুকু।

একজন ভিডিও এডিটর কখনােই অফিসে যান না কিন্তু তিনিও ৫০ হাজার টাকা মাসে ইনকাম করেন। তাকে বিভিন্ন দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রতি সপ্তাহে একটি করে মুভি বা নাটক এডিট করার জন্য ভিডিও পাঠানাে হয় আর তিনি এডিট করে পুনরায় সেন্ড করে টাকাটা ব্যাংকে নিয়ে নেন। এক্ষেত্রে তিনি একজন ফ্রিল্যান্সার। তাহলে আমরা জানতে পারলাম যে এই ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজ আমরা সব জায়গায় দেখি । | একটি ব্যাংকে যিনি হিসাব করেন, তিনি তাে অবশ্যই কম্পিউটারে বসে হিসাব করেন এবং সেটি ইন্টারনেটে বসে করেন। একজন হিসাবকারীও তার এই দক্ষতা দিয়ে ফ্রিল্যান্সিংএর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে পারেন।।

একজন আর্কিটেকচার ডিজাইনার যিনি সুন্দর সুন্দর বাড়ির নকশা তৈরি করে দেন, তিনিও বিদেশি কোনাে মানুষের বাড়ির ডিজাইন তৈরি করে দিয়ে ডলার ইনকাম করতে পারেন।

একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার যে-কোনাে বিদেশি মানুষের সফটওয়্যার তৈরি করে দিয়ে তার ব্যাংকে মূল্যটা নিতে পারেন।

ঠিক এভাবেই ফ্রিল্যান্সাররা আসলে তাদের এইসব দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশে চাকরি না করে বিদেশিদের কাজ করে এবং ভালাে অ্যামাউন্টের ডলার উপার্জন করে, একটি স্বাধীন জীবন যাপন করেন। আর তাই এটি একটি স্বাধীন পেশা বলা হয়। আশা করা যায় আপনি পুরােপুরি ক্লিয়ার হতে পেরেছেন যে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সেগুলােই, যেগুলাে বাংলাদেশের বা বাইরের কোম্পানিতে কর্মচারীরা কম্পিউটারে বসে করেন। আর অবশ্যই বিভিন্ন কোম্পানিতে বিভিন্ন দক্ষতার মানুষ বিভিন্ন কাজ কম্পিউটারে করেন। সবাই কিন্তু হিসাবপত্র নিয়ে থাকে না। কেউ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আর্কিটেকচার, কেউ ভিডিও এডিটর, কেউ ফটো এডিটর, কেউ গ্রাফিক্স ডিজাইনার, কেউ লােগাে বা মনােগ্রাম ডিজাইনার, বিজনেস/ভিজিটিং কার্ড ডিজাইনার, কেউ মার্কেটার ইত্যাদি। | সুতরাং, আপনি আইসিটি বিষয়ে যে-কোনাে অভিজ্ঞতার অধিকারী হয়ে বাংলাদেশের কোনাে কোম্পানিতেও চাকরি করতে পারেন অথবা ফ্রিল্যান্সিংও করতে পারেন। ব্যাপারটি পুরােটাই আপনার ওপর নির্ভর করে। এমন কি আপনি একই দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশেও কোনাে কোম্পানিতে চাকরি করতে পারেন এবং বাড়িতে এসে বিদেশি বায়ারেরও কাজ করে আয় করতে পারবেন।


ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজ যেভাবে সম্পন্ন হয়।

এবারের অংশে আপনি জানবেন ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে সব ধরনের অভিজ্ঞতা থাকার পরে দৈনন্দিকভাবে কাজটি কীভাবে সম্পন্ন করতে হয়।

বর্তমানে আমরা ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, নিউজ ওয়েবসাইটে বেশি সময় দিয়ে থাকি। এর বাইরে আরও অনেক কিছুই আছে, যা আমাদের মধ্যে অধিকাংশই জানি না। আপনি যদি এখন ফেসবুকে ঢােকেন তবে হয়তাে আপনি অনেক স্ট্যাটাস, নােটিফিকেশন, অনলাইন ফ্রেন্ডস পাবেন। তাদের মেসেজ করতে পারেন, চ্যাট করতে পারেন।

কিন্তু আপনি জানেন কি এই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতাে আরও হাজারও ওয়েবসাইট আছে, ফেসবুকের মতােই লাখ লাখ মানুষ সেখানে অ্যাকাউন্ট করে এবং অনলাইন থাকে, চ্যাট করি, ছবি সেন্ড করি, কমেন্ট করি ইত্যাদি করে। কিন্তু সেখানে এগুলাে করলে টাকা ইনকামের অপশন থাকে। আপনি হয়তাে চমকে গেলেন এবং ভাবছেন যে অই ওয়েবসাইটগুলােতেও অ্যাকাউন্ট করতে হবে এবং আড্ডা দিতে হবে।

একদমই ভুল। ফেসবুক যেমন একটি সামাজিক মাধ্যম, প্রথম আলাে যেমন একটি নিউজ পেপার, এমাজন/আলি এক্সপ্রেস/দারাজ ডট কম যেমন অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট এবং প্রােডাক্ট সেল হয়, ঠিক তেমনি এমন কিছু ওয়েবসাইট আছে, যেখানে আপনার সেবা বা সার্ভিস আপনি সেল করতে পারবেন। সেবা বা সার্ভিস বলতে আপনার কাজের দক্ষতা সেল করা। যেমন আপনি ফটো এডিটিং করতে পারেন। আপনি যদি কাউকে ফটো এডিট করে দিতে পারেন তবে তিনি আপনাকে টাকা দিবেন। ঠিক। এটি করলেন মানে আপনি আপনার সার্ভিস সেল করলেন। | তাই এসব কমন ওয়েবসাইট বাদ দিয়ে আরও কিছু ওয়েবসাইট আছে, যেখানে আপনি ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজ করে দিতে পারবেন এবং এগুলােকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস।

যেমন :

www.fiverr.com

www.upwork.com

www.freelancer.com ইত্যাদি


এবার চলুন আপনাকে এই কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে একটি ধারণা দেয়া যাক :

আপনি যেমন ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। ঠিক তেমনি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনি www.freelancer.com এ অ্যাকাউন্ট করতে পারবেন। (এসব বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে আরও ভালাে করে আলােচনা হবে)। _ আপনি ফেসবুকে কাউকে মেসেজ দিতে পারেন, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসেও মেসেজ দেওয়া যায়, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া যায়, কিন্তু সেটি আসলে স্ট্যাটাস নয়, সেটিকে আমরা সাধারণ চাকরির সার্কুলার” হিসেবে ধরে নিতে পারি। আমরা যেমন ফেসবুকে কমেন্ট করে তার স্ট্যাটাস সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারি। আর এই মন্তব্য ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করার আবেদন” হিসেবে ধরে নেয়া যায়। এক্ষেত্রে জব সার্কুলার ফ্রিল্যান্সাররা খুব একটা দেয় না। জব সার্কুলার বিভিন্ন বায়াররা দিয়ে থাকেন, আর ফ্রিল্যান্সাররা সেখানে আবেদন করে থাকেন। ঠিক তেমনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের একটি জব সার্কুলার-এর নমুনা দেখে নেওয়া যাক ।

পর্ব 3


No comments

Powered by Blogger.